থাই ভিসার আদ্যোপান্ত , কিভাবে করবেন এবং যা যা লাগবে

থাই ভিসার আদ্যোপান্ত , কিভাবে করবেন এবং যা যা লাগবে ।

থাইল্যান্ড সারা বিশ্বেই অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমান বন্দরে নামলেই এর সত্যতা বুঝতে পারবেন। সারা পৃথিবী থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় করে থাইল্যান্ডে। আমাদের দেশে থাইল্যান্ডের পর্যটনের নেতিবাচক দিকগুলোই বেশি আলোচিত হয়, অথচ পরিবার পরিজন নিয়েও ঘোরার জন্য সাদা হাতির দেশ নামে খ্যাত এ দেশটিতে পর্যটন গন্তব্যের অভাব নেই। ফুকেট, ক্র‌্যাবি, কোহ সা মুইয়ের মতো জায়গাগুলোতে মধুচন্দ্রিমা বা পরিবার নিয়ে অবকাশে আসা পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স ব্যাংককের সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে। তার মধ্যে রয়েছে থাই এয়ারওয়েজ, বিমান বাংলাদেশ, রিজেন্ট, ইউএসবাংলা। আগে থেকে টিকেট কাটলে ২০-২২ হাজার টাকাতেও টিকেট কাটা সম্ভব হয়। তবে থাইল্যান্ড যাবার জন্য বাংলাদেশিদের অবশ্যই ভিসা করে যেতে হয়।

ভিসা নেবার পদ্ধতি খুব জটিল না, তবে প্রথমবার যারা আবেদন করেন তাদের কাছে কঠিন মনে হতে পারে। বাংলাদেশে অবস্থিত থাই দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয় ভিএফএস গ্লোবালের মাধ্যমে। আপনি চাইলে তাদের মাধ্যমে সরাসরি আবেদন করতে পারেন অথবা কোনো ট্রাভেল এজেন্টকে দিয়েও করতে পারেন ভিসা। আমি সবসময় থাই ভিসা ভিএফএসে সরাসরি জমা দিয়েছি। ভিসার আবেদনপত্র অনলাইনেই পূরণ করা যায়। এছাড়া ডাউনলোড করেও প্রিন্ট করে হাতে লিখে জমা দিতে পারেন। আবেদনপত্রটি পাবেন এই লিংকে ( http://www.vfsglobal.com/…/Manual_Visa_Application_Form.html) । ভিএফএসের অফিসের ঠিকানা হচ্ছে:

১. এজে হেইটস (নীচতলা), ৭২/১/ডি, প্রগতি স্মরণী, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা।

২. চেম্বার হাউজ (৫ম তলা), আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, চট্টগ্রাম।

৩. নির্ভানা ইন, ৮ম তলা, মির্জা জাঙাল রোড, রামের দীঘির পাড়, সিলেট।

আবেদনপত্র পূরণ করার পদ্ধতি খুব সহজ, এক পাতার আবেদপত্রে না বোঝার মত একটা মাত্র লাইন আছে সেটা হচ্ছে আপনার পাসপোর্ট কোন কোন দেশের জন্য বৈধ। এটার উত্তর আসলে পাসপোর্টেই লেখা আছে, “ইসরাইল ব্যতিত পৃথিবীর সব দেশ”। এছাড়া আপনার বুকিং করা বিমান টিকেটে উল্লেখিত ফ্লাইট নাম্বার দিতে হবে। থাইল্যান্ডে কোথায় থাকবেন, সে জায়গার কোনো হোটেলের নাম ও ঠিকানা দেবেন। আবেদন পত্র পূরণ হয়ে গেলে প্রিন্ট নিয়ে চলে যাবেন ভিএফএসে। মনে রাখবেন আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয় সকাল ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত, এ সময়ের মধ্যে আপনাকে ভিএফএসে পৌঁছাতে হবে। আবেদনপত্র অনলাইনে ট্রেক করতে পারবেন। সাধারণত ৫ কর্মদিবসের মধ্যেই পাসপোর্ট ফেরত পেয়ে যাবেন, ভিসা দেয়া হয়েছে কিনা সেটা পাসপোর্ট পেলে বুঝতে পারবেন। সিংগেল এন্ট্রি ভিসা ফি ২,৯০০ টাকা। এর সাথে ভিএফএস এর সার্ভিস ও ব্যাংক ফি রয়েছে ৫৪০ টাকা, অর্থ্যাৎ সর্বমোট ৩,৪৪০ টাকা জমা দিতে হবে।

ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য যে সমস্ত কাগজপত্র দিতে হয় সেগুলো নিচে দেয়া হলো:

১. সঠিকভাবে পূরণকৃত আবেদনপত্র, মনে রাখবেন আবেদপত্রে দু’জায়গায় স্বাক্ষর দেবার বিষয় আছে, অবশ্যই দু’জায়গায় স্বাক্ষর করবেন।

২. পাসপোর্ট, অন্তত ছয়মাস মেয়াদ থাকতে হবে।

৩. পাসপোর্টের ফটোকপি, আগের কোনো থাই ভিসা থাকলে তার ফটোকপিও দেবেন।

৪. দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ৬ মাসের মধ্যে তোলা হতে হবে।

৫. ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট। মনে রাখবেন, দুটোই লাগবে। ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট আপনার ব্যাংককে বললে তারা ইস্যু করে দিবে। আর ব্যাংক স্টেটমেন্টের ক্ষেত্রে মনে রাখবেন, মূল কপিই জমা দিতে হবে এবং ক্লোজিং ব্যালেন্স অন্তত ৬০,০০০ টাকা হতে হবে। পরিবারের জন্য আবেদন করলে ১,২০,০০০ টাকা থাকতে হবে। এছাড়া আপনাকে যদি আপনার অফিস পাঠায় সেক্ষেত্রে অফিসের ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্ট ও ট্রেড লাইসেন্সের কপি দিতে হবে। কোন ডকুমেন্ট যদি বাংলায় থাকে সেটা নোটারী পাবলিক থেকে ইংরেজীতে অনুবাদ করে জমা দিতে হবে। তবে অফিসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিলেও নিজের ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগে দেয়া ভালো।

৫. বিমান টিকেট/বুকিং এর কপি দিতে হবে।

৬. আপনি যদি চাকুরিজীবি হন, তবে আপনার অফিস থেকে একটি ভিসা প্রদানের জন্য অনুরোধপত্র দিতে হবে। সাধারণত এ ধরনের চিঠিতে আপনার পদমর্যাদা, পাসপোর্টের তথ্য ও ছুটির বর্ণনা দেয়া থাকে। নিজ অফিসের মানব সম্পদ বিভাগে যোগাযোগ করলে তারা এ ধরনের পত্র দিয়ে দেবে। শিক্ষার্থী হলে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একই ধরনের পত্র লাগবে।

৭. ব্যবসায়ী হলে বা নিজেই প্রতিষ্ঠানের মালিক হলে ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি ও নোটারি পাবলিক থেকে করা অনুবাদের মূল কপি জমা দিতে হবে।

ভিএফএস সেন্টারে সব কাগজপত্র নিয়ে হাজির হলে তারা কাগজপত্র দেখে টাকা জমা দিতে বলবে। ভিএফএস সেন্টারের মধ্যেই থাকা ব্র‌্যাক ব্যাংকের বুথে ৩,৪৪০ টাকা জমা দিয়ে সেটা সহ আবেদন পত্র জমা দিয়ে দিলে আপনার কাজ আপাতত শেষ। এরপর ভিসার আবেদপত্রের সর্বশেষ পরিস্থিতি আপনি অনলাইনেই দেখতে পারবেন। থাই দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট ফেরত আসার পর আপনি সেটা সংগ্রহ করতে যাবেন।

থাই দূতাবাস ব্যাংকে আপনার তথ্য জানার জন্য যোগাযোগ করবে। সেক্ষেত্রে আবেদনপত্র জমা দেবার পর আপনার ব্যাংক স্টেটম্যান্টে দেয়া অর্থের চেয়ে কম থাকলে আবেদন পত্র বাতিল হতে পারে। এছাড়া প্রথমবার থাই ভিসা আবেদনকারীকে থাই দূতাবাস ফোন দিয়ে তথ্য যাচাই করতে পারে। এ ফোন কলটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, চেষ্টা করবেন যাতে ফোনটি রিসিভ করা যায়। সাধারণত পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যেই ভিসা প্রসেসের কাজ শেষ হয়। কিন্তু তথ্য সংক্রান্ত কোনো বিভ্রান্তি দেখা দিলে সেটা ভিসা পেতে দেরি হতে পারে। অনেক সময় অতিরিক্ত কোনো ডকুমেন্ট চেয়ে ফোন দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ভিএফএসে গিয়ে আবার সে ডকুমেন্ট দিয়ে আসতে হবে। ভিসা পেলে ভিসার মেয়াদ তিন মাস থাকবে, এর মধ্যেই আপনাকে থাইল্যান্ডে ডুকতে হবে।

Popular posts from this blog

ভূটান_ট্যুর (৫ রাত / ৪ দিন)

সূরা ইখলাস, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সূরা ইখলাস এক-তৃতীয়াংশ কুরআনের সমান

১৬ বছর আগে যখন মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুক বানানো শুরু করছিলেন